নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নে বিএনপি নেতার ছেলের নেতৃত্বে সংঘটিত হামলার ঘটনায় এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে এক নিরীহ পরিবার। শুধু তাই নয়, আশ্রয়দানকারীদের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুড়িরচর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কালিরচর গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে সেলিম উদ্দিনের সঙ্গে তার ভাতিজাদের জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। গত ২৩ জুন বিদ্যুৎ সংযোগের একটি পিলার বসানোকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র সাবেক ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর ছেলে হৃদয় চৌধুরী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাতাহাতির এক পর্যায়ে হৃদয় চৌধুরী আহত হন। এরপর নিজাম চৌধুরী ইসলামিয়া বাজার থেকে লোক এনে সেলিমের পরিবারের উপর হামলা চালান। হামলায় সেলিমের স্ত্রী মরিয়ম বেগম অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে পার্শ্ববর্তী এক প্রতিবেশীর ঘরে আশ্রয় দেওয়া হয়। কিন্তু হামলাকারীরা সেখানেও হামলা চালায়, ঘর তছনছ করে দেয়।
এই ঘটনায় আশেপাশের কেউ আর সেলিমদের আশ্রয় দিতে সাহস করেনি। ফলে পরিবারটি বাধ্য হয়ে বড় মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে তারা গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপনে রয়েছে।
এ বিষয়ে সেলিম বলেন, "আমার ভাতিজা মিল্লাদ প্রভাবশালী ও ধনী। সেই কারণে নিজাম চৌধুরী তাদের পক্ষ নিয়ে আমাদের ঘায়েল করার চেষ্টা করছে। তাদের হামলায় আমার স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা আহত হয়েছে। আমরা এখন নিজের এলাকায় ফিরতে পারছি না।"
এই ঘটনার একটি ৫২ সেকেন্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, হৃদয় চৌধুরী দা হাতে হামলায় অংশ নিচ্ছেন এবং তাকে অনেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নিজাম চৌধুরী বলেন, "আমি এই ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নই। তারা নিজেদের ঘর ভেঙে আমাদের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে।" তবে ভিডিওতে তার ছেলেকে লোহার রড হাতে দেখা গেছে—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
হাতিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম আজমল হুদা জানান, "ঘটনার বিষয়ে উভয় পক্ষ থানায় অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে অহেতুক হয়রানি করা হবে না।"
এলাকাবাসীর মতে, রাজনৈতিক প্রভাব ও সম্পদের জোরে একপক্ষ চাপে রাখতে চাইছে অপর পক্ষকে। এতে সামাজিক নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
সংগৃহীত ভিডিও প্রমাণ, আহতদের স্বীকারোক্তি ও স্থানীয়দের বক্তব্যের ভিত্তিতে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।