নেতানিয়াহুর সরকার পতনের দ্বারপ্রান্তে: ইসরায়েলে রাজনৈতিক ভূমিকম্প
ইসরায়েলে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও এক ধাপ বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোট সরকার এখন একেবারে ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে। ইসরায়েলের অন্যতম শক্তিশালী ধর্মীয় রাজনৈতিক দল United Torah Judaism (UTJ) হঠাৎ করেই জোট সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় নেতানিয়াহুর জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে।
বর্তমানে ইসরায়েলি পার্লামেন্ট "কনেসেট"-এ ১২০টি আসনের মধ্যে নেতানিয়াহুর জোটের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬১-তে। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে যদি আরও একটি দল যেমন Shas বা Religious Zionism সমর্থন প্রত্যাহার করে, তাহলে সরকার সরাসরি সংখ্যালঘুতে পরিণত হবে এবং একপ্রকার পতন অনিবার্য হয়ে উঠবে।
জোট ভাঙার মূল কারণ হিসেবে সামনে এসেছে সামরিক পরিষেবায় ধর্মীয় ছাত্রদের অব্যাহতির বিল। দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো চায় যে তাদের ধর্মতাত্ত্বিক শিক্ষার্থীদের জন্য সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া ঐচ্ছিক রাখা হোক। কিন্তু ইসরায়েলের সর্বোচ্চ আদালতের সাম্প্রতিক এক আদেশ অনুযায়ী, সকল নাগরিকের জন্য সমান সামরিক দায়িত্ব প্রযোজ্য হবে। এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেই UTJ সরকার থেকে সরে দাঁড়ায়।
এই পরিস্থিতি নেতানিয়াহুর জন্য অত্যন্ত সংকটজনক। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযান, অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক চাপ এবং আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে এমন একটি জোট সংকট তার সরকারের ভবিষ্যৎকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এটি ২০১৯ সালের পর থেকে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকটগুলোর একটি হতে পারে।
বিরোধী জোট ইতিমধ্যেই এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্দোলন শুরু করেছে। বামপন্থী দলগুলো বলছে, এই সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তারা নতুন নির্বাচনের দাবি তুলেছে, যাতে জনমতের ভিত্তিতে একটি স্থিতিশীল সরকার গঠন সম্ভব হয়। অন্যদিকে নেতানিয়াহু এখনও তার জোটকে ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শোনা যাচ্ছে, তিনি বিকল্প দলগুলোর সাথে আলোচনা শুরু করেছেন যাতে নতুন করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করা যায়।
তবে শাসনক্ষমতা ধরে রাখার এই লড়াই শুধু রাজনীতির সীমায় নয়, বরং দেশের নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যৎ অভিমুখ নির্ধারণেও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, ইসরায়েলের ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের মাঝে এই সংকট যেন এক পুরনো সংঘাতের নতুন রূপ।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যদি এই সংকট থেকে উত্তরণের কোনো পথ না খোঁজা যায়, তাহলে একমাত্র বিকল্প হবে পুনঃনির্বাচন। আর সেটি মানেই হবে — গাজা যুদ্ধ, অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা, ও বৈশ্বিক চাপের মধ্যে একটি কঠিন নির্বাচন প্রক্রিয়া। সেইসাথে নেতানিয়াহুর দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারেও এটি একটি বড় ধাক্কা হতে পারে।
অন্যদিকে, সাধারণ জনগণের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। তারা আশঙ্কা করছে, জোট সরকারের এই ভাঙনের ফলে অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হবে, যা অর্থনীতি এবং জনজীবনের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
পরিস্থিতি এখন যেদিকে গড়াচ্ছে, তাতে বলা যায়—ইসরায়েলের রাজনৈতিক ইতিহাসে আরেকটি যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে। নেতানিয়াহুর জন্য এটি কেবল একটি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ নয়, বরং তার নেতৃত্বে জনগণের আস্থা ও ভবিষ্যত রাষ্ট্রীয় কৌশলগুলোকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।