টানা ১২ দিনের যুদ্ধের পরে অবশেষে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। কিন্তু এই যুদ্ধের মূল কারণ, অর্থাৎ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংসের পরিকল্পনা কতটা সফল হয়েছে—সেই প্রশ্ন এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইরানের ফোর্দো, ইসফাহান ও নাতাঞ্জ এই তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে দেশটির পারমাণবিক সক্ষমতা প্রায় ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
তবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, এই হামলার মাধ্যমে আমেরিকা “উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে।” তাঁর মতে, পারমাণবিক কর্মসূচির মূল ভিত্তিগুলো অক্ষতই রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প এখনও সচল এবং এই কর্মসূচি ধ্বংস করা এত সহজ নয়। এর পেছনে রয়েছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
১. শুধু তিনটি স্থাপনাই নয়, আরও গোপন কেন্দ্র আছে
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধু ফোর্দো, ইসফাহান ও নাতাঞ্জে সীমাবদ্ধ নয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আরও গোপন স্থাপনাও রয়েছে, যেগুলোর তথ্য বাইরের দুনিয়ার কাছে অজানা। ফলে তিনটি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে পুরো কর্মসূচি ধ্বংস করা সম্ভব নয়।
২. অর্জিত প্রযুক্তি ও জ্ঞান ধ্বংস করা যায় না
গত কয়েক দশকে ইরান যে পারমাণবিক প্রযুক্তি ও দক্ষতা অর্জন করেছে, তা আর হারানোর নয়। যদি কোনো স্থাপনা ধ্বংসও হয়, তবে সেই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা সহজেই নতুন করে কাজ শুরু করতে পারবে।
৩. গোপন কর্মসূচির সম্ভাবনা
বিশ্বের অনেক গোয়েন্দা সংস্থা মনে করে, ইরানের হাতে এমন কিছু গোপন পারমাণবিক প্রকল্প রয়েছে, যেগুলোর অস্তিত্ব এখনো নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এটি ইরানকে একটি কৌশলগত সুবিধা দেয়।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক জুলিয়ান বার্গারের মতে, ইরানের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো—সব চাপ ও বাধার মধ্যেও তাদের অস্তিত্ব টিকে রয়েছে। যদিও তাদের কর্মসূচিতে আঘাত এসেছে, তবুও প্রধান সক্ষমতাগুলো অক্ষুণ্ন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “ইরান প্রায় ৪০০ কেজি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম লুকিয়ে রেখেছে, যা দিয়ে অন্তত ১০টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব। অতএব, ইরান হয়তো এখন ভাবছে, পারমাণবিক অস্ত্র থাকলেই একমাত্র ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে—যেমনটা উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রে দেখা গেছে।”
তবে পশ্চিমা বিশ্বের চাপ ও কূটনৈতিক তৎপরতা এখন ইরানের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে। বিশেষ করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন আরও বেশি সরব হয়ে উঠবে।
Tags: ইরান পারমাণবিক শক্তি, ইরান ইসরাইল যুদ্ধ, ইরান আমেরিকা সংঘর্ষ, ইরানের ইউরেনিয়াম, পারমাণবিক অস্ত্র, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, মধ্যপ্রাচ্য নিরাপত্তা, ইরান পরমাণু চুক্তি