রাজধানী ঢাকার উত্তরা এলাকায় একটি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত একজন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে দুপুর ১টা ৬ মিনিটে, মিলেনিয়াম স্কুল ও কলেজের প্রাঙ্গণে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বিমানটি আকাশে ওড়ার কিছু সময় পরই নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং সরাসরি স্কুল ভবনের ছাদে আঘাত করে। তীব্র শব্দে চারপাশ কেঁপে ওঠে, সাথে সাথেই আগুন এবং কালো ধোঁয়া আকাশে ছড়িয়ে পড়ে।
দুর্ঘটনার বিবরণ
বিমানটি ছিল বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি F-7 BGI প্রশিক্ষণ জেট, যা মূলত নতুন পাইলটদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। চীনে তৈরি এ বিমানটি অত্যন্ত গতিশীল এবং শক্তিশালী হলেও অতীতেও এ ধরনের বিমান দুর্ঘটনার খবর দেশে-বিদেশে পাওয়া গেছে।
ঘটনাস্থলে জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয় দ্রুত। ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
হতাহতের তথ্য
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে অন্তত একজন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তি স্কুল প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন কিনা, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তিনি একজন বেসামরিক নাগরিক বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়াও ১০ থেকে ১৩ জনের মতো আহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক রয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। আহতদের রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পাইলটের অবস্থা
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, বিমানটির পাইলট ইজেকশন সিস্টেম ব্যবহার করে নিরাপদে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। তাকে সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে এবং বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আতঙ্ক
মিলেনিয়াম স্কুল ও কলেজে দুর্ঘটনার পরপরই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা চিৎকার করে দৌড়াতে থাকে, শিক্ষকরা দ্রুত সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন। স্কুলের একটি ভবনে আগুন ধরে যাওয়ায় আংশিক ক্ষতি হয়েছে, তবে সৌভাগ্যক্রমে পুরো ভবন ধসে পড়েনি।
ঘটনাস্থলে একটি বহুতল ভবনের ছাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং নিচতলার ক্যান্টিন পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। আশেপাশের ভবনগুলোতেও ভাঙা কাঁচ ও আগুনের আঁচ লেগেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
তদন্ত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে ইতিমধ্যেই ব্ল্যাক বক্স ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ জব্দ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তিগত ত্রুটি, মানবীয় ভুল বা যান্ত্রিক সমস্যার যেকোনো একটি বা একাধিক কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ ফ্লাইট পরিচালনার আগে আরও উন্নত সতর্কতা ও পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন।
প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, প্রায়ই এ এলাকায় সামরিক বিমান প্রশিক্ষণ চালানো হয়, যা জননিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। একজন অভিভাবক বলেন, "আমার সন্তান স্কুলে পড়ে। আজ দুর্ঘটনার কথা শুনে আমি বাকরুদ্ধ। কর্তৃপক্ষকে এখনই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।"
প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আহতদের দ্রুত ও উন্নত চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিহতের পরিবারকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
অতীত অভিজ্ঞতা
বাংলাদেশে এ ধরনের দুর্ঘটনা নতুন নয়। এর আগে চট্টগ্রাম এবং জসিমউদ্দিন এলাকায় বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানের সঙ্গে সংক্রান্ত কয়েকটি দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে পাইলট নিহত বা গুরুতর আহত হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন সময় এসেছে সামরিক উড্ডয়নের নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করার। জনবহুল এলাকায় ফ্লাইট নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি, প্রতিটি বিমান নিয়মিতভাবে যান্ত্রিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
উপসংহার:
আজকের বিমান দুর্ঘটনা শুধু একটি দুঃখজনক দুর্ঘটনা নয়, বরং এটি সামরিক নিরাপত্তা, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা ও নাগরিক নিরাপত্তার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা আবারও স্মরণ করিয়ে দিল। তদন্তের ফলাফলে যদি মানবিক বা কারিগরি ঘাটতির প্রমাণ মেলে, তবে সেই অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে সর্বত্র।