১৯৭৪ সালের ১৮ মে ভারত যখন ‘স্মাইলিং বুদ্ধ’ নামে তাদের প্রথম পারমাণবিক অস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালায়, তখন সারা দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেন— পাকিস্তান নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবেই।
ভুট্টো বলেছিলেন, "প্রয়োজনে আমরা ঘাস খেয়ে থাকব, অভাব-অনটনে দিন কাটাব, তবুও আমাদের নিজস্ব বোমা তৈরি করতেই হবে।" তিনি আরও বলেন, "যখন খ্রিস্টান, ইহুদি ও হিন্দুদের পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারে, তখন মুসলিমদের কেন থাকবে না?"
এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেন ড. আবদুল কাদির খান। ১৯৯৮ সালের মে মাসে পাকিস্তান সফলভাবে পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। তার এই অবদানের জন্য তিনি পাকিস্তানে জাতীয় বীর হিসেবে স্বীকৃতি পান এবং প্রায় ২৫ কোটি মানুষের চোখে হয়ে ওঠেন কিংবদন্তি।
সাবেক সিআইএ পরিচালক জর্জ টেনেট তাকে 'ওসামা বিন লাদেনের মতো বিপজ্জনক' বলে আখ্যা দেন। আর ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান শাবতাই শাভিত দুঃখ প্রকাশ করেন যে, তারা কাদির খানকে হত্যা করতে পারেননি।
ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষার (১১ মে ১৯৯৮) প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান একই মাসে বেলুচিস্তানের চাগাই মরুভূমিতে নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করে। এর মধ্য দিয়ে দেশটি বিশ্বের সপ্তম পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
কাদির খানের নিরাপত্তা ছিল রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের; তার গাড়িবহর ছিল প্রধানমন্ত্রীর মতোই এবং সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা তাকে পাহারা দিতেন।
২০০৪ সালে তিনি টেলিভিশনে স্বীকার করেন যে, পারমাণবিক নেটওয়ার্কে তিনি একাই কাজ করেছেন এবং পাকিস্তান সরকার কোনোভাবেই জড়িত ছিল না। প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ তাকে ‘আমার নায়ক’ বলে উল্লেখ করে সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষমা করে দেন। যদিও আন্তর্জাতিক চাপে তিনি ২০০৯ সাল পর্যন্ত গৃহবন্দী ছিলেন।
এক সাক্ষাৎকারে কাদির খান বলেন, "আমি প্রথমবার দেশের জন্য পারমাণবিক শক্তি এনে দেশকে রক্ষা করেছি, দ্বিতীয়বার সব দায় নিজের কাঁধে নিয়ে জাতিকে আবারও রক্ষা করেছি।"
২০২১ সালে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাকে 'জাতীয় প্রতীক' হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আজও তিনি পাকিস্তানে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে আছেন।