রাশিয়া ও এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে পারমাণবিক শক্তি নিয়ে সম্ভাব্য নতুন জোটের গন্ধ পাচ্ছেন বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার পারমাণবিক সহযোগিতার ঘোষণা অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন তুলেছে—এ কি কেবল শুরু, না কি এর পেছনে রয়েছে আরও বড় কৌশল?
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত পারমাণবিক সংস্থা Rosatom সম্প্রতি মালয়েশিয়ার সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার টেবিলে বসে। আলোচনার বিষয়—পারমাণবিক প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং কারিগরি সহযোগিতা। রাশিয়া জানিয়েছে, তারা মালয়েশিয়াকে এই খাতে সহায়তা করতে আগ্রহী এবং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের অংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মালয়েশিয়াকে ঘিরে এই উদ্যোগ হয়তো শুরু, কিন্তু থামার নয়। রাশিয়া তাদের বৈশ্বিক কৌশলের অংশ হিসেবে মুসলিমপ্রধান এশিয়ান দেশগুলোকে নিজের বলয়ে আনতে চাচ্ছে। এমন সময় যখন পশ্চিমা প্রভাব এবং চীনা আধিপত্য নিয়েও বিতর্ক চলছে, তখন রাশিয়ার এমন পদক্ষেপ আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে।
মালয়েশিয়া: শুরুটা এখানেই
মালয়েশিয়া বর্তমানে বিদ্যুৎ ঘাটতি এবং জ্বালানি নির্ভরতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় অংশই এখনো কয়লা ও গ্যাস নির্ভর। এই অবস্থায় পরিবেশবান্ধব ও দীর্ঘস্থায়ী শক্তি হিসেবে পারমাণবিক শক্তির দিকে ঝুঁকছে দেশটি। রাশিয়াও এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে সম্পর্ক জোরদার করছে।
আরও দেশ যুক্ত হবে?
বর্তমানে সরাসরি কোনো চুক্তি না হলেও, সূত্রের দাবি, রাশিয়া এরকম উদ্যোগ বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্তানসহ অন্যান্য মুসলিম দেশেও নিতে পারে। বিশেষ করে যেসব দেশ জ্বালানি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ চায়—তাদের টার্গেট করছে রাশিয়া।
নতুন জিও-পলিটিকাল বাস্তবতা?
বিশ্ব রাজনীতিতে এই মুহূর্তে একটি মেরুকরণ চলছে—একদিকে পশ্চিমা বিশ্বের আধিপত্য, অন্যদিকে রাশিয়া ও চীনের বলয় সম্প্রসারণ। এই প্রেক্ষাপটে পারমাণবিক শক্তির মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে রাশিয়ার এমন সহযোগিতা অনেক গভীর বার্তা বহন করে।
বাংলাদেশ, পাকিস্তান কিংবা ইরান—এই দেশগুলোও ভবিষ্যতে এমন কৌশলগত পারমাণবিক সহায়তার আওতায় আসতে পারে বলেও মনে করছেন কূটনৈতিক মহল। তবে সবকিছু নির্ভর করছে স্থানীয় সরকারের নীতির ওপর।
উপসংহার
মালয়েশিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার পারমাণবিক সহযোগিতা নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। যদিও এখন পর্যন্ত একে এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোর যৌথ উদ্যোগ বলা যায় না, তবে এটি যে একটি নতুন কৌশলগত অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
রাশিয়ার পরবর্তী লক্ষ্য কারা? এই প্রশ্ন এখন অনেক রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।