মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সাম্প্রতিক এক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণ বলছে, যুদ্ধবিরতির সময়টাকে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করে ইরান ইসরাইলের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশ্লেষণটি প্রকাশিত হয়েছে সম্মানজনক সংবাদমাধ্যম Middle East Eye-এ, যেখানে লেখক ছিলেন মিনহো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ এসলামি এবং ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি সান মার্কোসের মধ্যপ্রাচ্য ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইব্রাহিম আল-মারাশি।
দুজনই মনে করেন, ইরান তার পুরনো ‘ধৈর্য নীতির’ আধুনিক সংস্করণ প্রয়োগ করছে। এই ধৈর্য অর্থ নীরব থাকা নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত প্রত্যাঘাতের জন্য শক্তি সঞ্চয়। লেখকদের মতে, এই বিরতির সময়কে তেহরান ব্যবহার করছে তিনটি মূল উদ্দেশ্যে:
১. রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব পুনর্গঠন
২. অস্ত্রভাণ্ডার পুনঃসংস্থান ও আধুনিকায়ন
৩. আন্তর্জাতিক মিত্রতা জোরদার করে কূটনৈতিক ব্যাকআপ তৈরি
তারা উল্লেখ করেন, ইরান এখন কেবল সাইবার যুদ্ধ বা অনিয়মিত নৌ হামলার মতো ‘নন-কনভেনশনাল’ রণকৌশলেই থেমে নেই, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে, যার জন্য দরকার কৌশলগত সময় এবং পরিস্থিতির সঠিক বিশ্লেষণ।
এই পরিস্থিতিতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যেখানে যুদ্ধকে ‘জয়’ হিসেবে অভিহিত করছেন, সেখানে ইরানও পরোক্ষভাবে নিজেদের বিজয়ী বলছে—একটি কৌশলগত প্যাটার্ন, যা ১৯৮০–১৯৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধেও দেখা গেছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ইরান বারবার দাবি করে যে তারা ‘আরোপিত যুদ্ধ’-এর শিকার, এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেপথ্য সমর্থনেই এসব সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। যুদ্ধ শেষে ইরান তার ‘কৌশলগত ধৈর্য’ দেখিয়ে রাজনৈতিক ও কৌশলগত লাভ আদায় করে—এটি তাদের পুরনো সফল রণনীতি, যা আবারও বাস্তবায়ন হচ্ছে।
এই মুহূর্তে ইরান যে প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা শুধু সামরিক দিক থেকে নয়—আন্তর্জাতিক প্রভাব, মিত্রতা, পারমাণবিক কার্যক্রম পুনর্মূল্যায়ন ও ভবিষ্যৎ যুদ্ধকৌশল পর্যন্ত বিস্তৃত। তাই বলা যায়, এই বিরতি ইরানের জন্য বিশ্রামের সময় নয়, বরং যুদ্ধমঞ্চে আরও শক্তিশালীভাবে ফেরার প্রস্তুতি।