জরুরি অবস্থা ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগে ঐকমত্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে নতুন প্রস্তাব বিএনপির
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে চলমান সংলাপে জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রক্রিয়া ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই দুটি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে আইনি কাঠামোতে রূপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জরুরি অবস্থা জারির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে রাষ্ট্রপতি সরাসরি মন্ত্রিসভার অনুমোদনের ভিত্তিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করবেন। এ সময় মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা বা অনুপস্থিত থাকলে তাঁর উপনেতা উপস্থিত থাকবেন। এটি সংবিধানের ১৪১(ক) অনুচ্ছেদের সংশোধন প্রস্তাব হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যেখানে 'অভ্যন্তরীণ গোলযোগ' শব্দের পরিবর্তে 'রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতার প্রতি হুমকি, মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ' যোগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া জরুরি অবস্থার সময় জীবনের অধিকার, বিচার ও দণ্ড সংক্রান্ত মৌলিক অধিকার স্থগিত করা যাবে না বলেও সকল রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত সংবিধানের ৩৫ ও ৪৭(ক) অনুচ্ছেদে প্রতিফলিত হবে।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে নতুন ঐকমত্য
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেবেন। তবে বিএনপি একটি নতুন প্রস্তাব দিয়েছে—যদি কোনো দল নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করে যে জ্যেষ্ঠতম দুজনের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান বিচারপতি করা হবে এবং তারা ক্ষমতায় আসে, তাহলে তারা সংবিধান সংশোধন করতে পারবে।
জামায়াতে ইসলামী প্রাথমিকভাবে আপত্তি জানালেও পরে ঐ প্রস্তাবে একমত হয়। এ নিয়ে কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ জানান, সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদে সুস্পষ্ট নিয়ম সংযোজন হবে, যাতে অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের অভিযোগে চলমান তদন্ত থাকলে ওই বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি করা যাবে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে নতুন প্রস্তাব ও বিতর্ক
ঐকমত্য কমিশন পূর্বের প্রস্তাব বাদ দিয়ে নতুন একটি সমন্বিত প্রস্তাব এনেছে। তবে আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ পাঁচ ধাপবিশিষ্ট একটি বিকল্প রূপরেখা উপস্থাপন করেন। প্রস্তাবিত পাঁচ ধাপে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা, সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত, বিকল্প প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তি ও প্রয়োজনে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মতো পুরোনো পদ্ধতির প্রয়োগের প্রস্তাব রয়েছে।
তবে জামায়াতে ইসলামী এই প্রস্তাবে আপত্তি জানায়। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, পূর্ববর্তী প্রস্তাবগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কে না জানিয়ে নতুন প্রস্তাব দেওয়ায় এটি গ্রহণযোগ্য নয়।
আলোচনার শেষে আলী রীয়াজ জানান, যদি কোনো দল নতুন প্রস্তাব দিতে চায়, তাহলে তা আজ সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে লিখিতভাবে জমা দিতে হবে।
উপসংহার
জরুরি অবস্থা ও বিচার বিভাগীয় পদ্ধতির সংস্কারে ঐকমত্য প্রমাণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় স্বার্থে একযোগে কাজ করার প্রস্তুতি রয়েছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে মতভেদ এখনো বিদ্যমান। মঙ্গলবারের আলোচনা এসব ইস্যুর ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।