কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় ঘটে যাওয়া নারীর ওপর যৌন সহিংসতার ঘটনায় চার যুবককে গ্রেপ্তার করে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় মামলা হয়েছে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুরে কুমিল্লা আমলী আদালত-১১ এর বিচারক মমিনুল হক এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মুরাদনগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন আদালতে চার আসামির রিমান্ড আবেদন করেন। কুমিল্লা আদালত পুলিশের ইনচার্জ সাদিকুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
🔎 অভিযুক্তদের পরিচয়:
রিমান্ডে পাঠানো চার যুবক হলেন—
সুমন (আব্দুল হান্নানের ছেলে)
রমজান (জাফর আলীর ছেলে)
মো. আরিফ (মো. আলমের ছেলে)
মো. অনিক (মো. তালেম হোসেনের ছেলে)
এদের প্রত্যেকেই ওই এলাকায় পরিচিত এবং অভিযোগপত্র অনুযায়ী যৌন নির্যাতন ও ভিডিও ধারণে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল।
📆 ঘটনার পটভূমি:
গত ২৬ জুন (বৃহস্পতিবার) রাতে মুরাদনগরের একটি এলাকায় একজন নারীর ওপর যৌন সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ওই সময় অভিযুক্তরা তাকে মারধর করে এবং ঘটনাটি মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে।
এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ২৯ জুন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যা দ্রুত ভাইরাল হয়। এতে জনমনে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, এক যুবক ওই নারীকে নির্যাতন করছে এবং অন্যান্যরা তা ক্যামেরাবন্দি করছে।
⚖️ মামলার অগ্রগতি:
এই ঘটনার পরপরই ভুক্তভোগী নারী থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ প্রথমে চার যুবককে পর্নোগ্রাফি আইনে গ্রেপ্তার করে।
অন্যদিকে, যৌন নির্যাতনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ফজর আলী নামের এক যুবককে। তিনি বর্তমানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন এবং পুলিশ পাহারায় রয়েছেন।
📢 পুলিশ ও আদালতের বক্তব্য:
আদালত পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত মামলায় চার অভিযুক্তকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এই রিমান্ডের মেয়াদ আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে শেষ করতে হবে বলে আদালত নির্দেশ দিয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই রিমান্ডের মাধ্যমে ঘটনার পেছনের মোটিভ, অংশগ্রহণকারী অন্যদের নাম, এবং ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখা হবে।
📌 সামাজিক প্রতিক্রিয়া:
এই ঘটনায় মুরাদনগরসহ গোটা কুমিল্লা জেলায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এলাকাবাসী দ্রুত বিচার এবং কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
📚 আইনি দৃষ্টিভঙ্গি:
আইনজীবীরা বলছেন, ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি—এই দুটি আলাদা কিন্তু মারাত্মক অপরাধ। ধর্ষণের ক্ষেত্রে দোষ প্রমাণিত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। আর পর্নোগ্রাফি আইনে ভিডিও ধারণ ও প্রকাশের জন্য ৫ থেকে ৭ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
🔚 উপসংহার:
মুরাদনগরের এই ঘটনাটি আবারো স্মরণ করিয়ে দিল, সমাজে নারীর নিরাপত্তা এখনও কতটা হুমকির মধ্যে রয়েছে। প্রশাসনের উচিত কঠোর তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা এবং ভবিষ্যতের জন্য কঠিন বার্তা দেওয়া।